সৌদিতে হাসিনা-ট্রাম্প বৈঠকের সম্ভাবনা

সৌদি আরবে আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথমবার বিদেশ সফরে যাচ্ছেন সৌদি আরবে। দেশটিতে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সামিটে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় রওনা দিচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানরা সৌদি আরবে আসতে শুরু করেছেন।

ঢাকা ও রিয়াদের ক‚টনৈতিক সূত্রগুলো বলছে বাদশাহ আব্দুল আজিজ কনভেনশন সেন্টারে আগামীকাল সামিট চলাকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। ট্রাম্প ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা এই সম্মেলনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরো শক্তিশালী মিলিত উদ্যোগের কৌশল বের করবেন।

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা দমনে সরকারের বিশেষ সাফল্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরবে এ সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে ক‚টনীতিকরা মনে করছেন। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস শুধু বাংলাদেশ নয় একটি বিশ্বের অভিন্ন সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ইস্যু ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

রিয়াদে বাংলাদেশের এক ক‚টনীতিক বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলাদা কোনো বৈঠক নির্ধারিত না হলেও এবং সে সময় না থাকলেও সম্মেলনে আগত নেতারা একে অপরের সঙ্গে পারস্পরিক মত বিনিময় করবেন, অনির্ধারিত বৈঠকে বসতে পারেন। ট্রাম্প ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কোনো বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে কি না ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর কাছে সাংবাদিকরা তা জানতে চাইলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, ‘দেখা যাক’।

সৌদি আরবে ৩ দিনের এ ইভেন্টে রিয়াদে ৩টি পৃথক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বাদশাহ সালমান ইতিমধ্যে রিয়াদে এসে পৌঁছেছেন। সৌদি-ইউএস সামিট, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল-ইউএস সামিট ও আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সামিট এ ৩টি পর্যায়ে পৃথক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এর আগে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান সৌদি নেতৃত্বে ৪১ জাতি সামরিক জোটের নেতাদের আমন্ত্রণ জানান। এ জোটের লক্ষ্য হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়াই করা। বাংলাদেশের তরফ থেকে ইতিমধ্যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে মক্কা কিংবা মদিনা আক্রান্ত হলে বা প্রয়োজন্যে সৌদি আরবে সৈন্য পাঠাবে বাংলাদেশ। সামরিক জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ। এ বিষয়টি বাংলাদেশকে কিছুটা হতাশ করে। কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাংলাদেশ বিদেশে সৈন্য না পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ তবে সৌদি আরবে পবিত্র দুই মসজিদে কোনো হামলা হলে বাংলাদেশ সৈন্য পাঠাতে রাজি বলে জানিয়েছে।

তবে সৌদি নেতৃত্বে সন্ত্রাস বিরোধী এ জোটের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়োগ দেওয়ায় অনেক মুসলিম দেশ বিষয়টি অপছন্দ করেছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী জানান, সৌদি নেতৃত্বে যে জোটের কথা বলা হচ্ছে তা এখনো বিকাশমান। কোনো নীতিমালা এখনো প্রণয়ন হয়নি। এখনো তা আলোচনার পর্যায়ে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ বরং এধরনের জোটের পরিবর্তে গেøাবাল সেন্টার ফর কমব্যাটিং থটস সেন্টার গড়ে তোলার পক্ষপাতি।

সৌদি আরবে এ সম্মেলন চলাকালে রিয়াদে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে একটি ফোরাম গঠনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। দি কিং ফয়সাল সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইসলামিক স্টাডিস’এর উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের গবেষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ আলোচনায় অংশ নেবে। ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেরিরিজম কোয়ালিশন নামে এ জোট ৩দিনের এ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক অভিন্ন কৌশল বের করার চেষ্টা করবে। ডেইলি স্টার থেকে অনুবাদ