সৌদি আরব সফরে যে পছন্দের মাংস খাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর তার প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরব গেলেন। তবে শুধু সৌদি আরব নয়, তার এই বিদেশ সফর নয় দিনের, যে সফরে তিনি যাবেন ইসরায়েল, সেখান থেকে বেলজিয়াম, ইটালি, ভাটিকান এবং সফরের শেষ অংশে রয়েছে নেটো ও জি-সেভেনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক। খবর বিবিসির।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ ঘরকুনো বলে পরিচিত। পরিচিত পরিবেশের বাইরে তিনি খুব একটা স্বস্তি বোধ করেন না। ঘরের আরাম, ঘরের খাওয়া আর নিজের বিছানা তার খুবই পছন্দের। ফলে আমেরিকার মধ্যেও তিনি বেশি ঘোরাঘুরি করেন না।

ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জোয়েল গান্টার লিখেছেন আমেরিকার বাইরে ঘোরাঘুরি করা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য কতটা অপছন্দের। জর্জ ডাব্লিউ বুশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার পর এই কয়দিনে দুটি দেশ সফর করে ফেলেছিলেন, আর বারাক ওবামা গিয়েছিলেন নয়টি দেশে। সে জায়গায় ট্রাম্প একই সময়ের মধ্যে আমেরিকার বাইরে পা বাড়াননি।

তিনি সময় কাটিয়েছেন শুধু হোয়াইট হাউসে আর তার বাইরে মারা লেগো নাম নিজের এক অবকাশ যাপন কেন্দ্রে। আর এই সময় তার মাথার উপরে চেপে বসেছে তার নির্বাচনের সময় রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক।

যখন তিনি প্রার্থী হন, তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন তিনি বেশি আমেরিকার বাইরে যাবেন না, কারণ আমেরিকার ভেতরেই তার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। তবে তিনি যে সবসময়ই আমেরিকায় থাকতেই বেশি সচ্ছন্দ বোধ করেন, নানা ঘটনা থেকে এটা পরিষ্কার।

বিবিসি সংবাদদাতা বলছেন ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রায় প্রতিটি জনসভা শেষে ম্যানহাটানে তার নিজের বিরাসবহুল ফ্ল্যাটে ফিরে এসেছেন- হয় হেলিকপ্টারে – নয় ব্যক্তিগত জেট বিমানে এবং তার এক সাবেক ব্যবসায়ী সহযোগী বলেছেন ট্রাম্প তার নামাঙ্কিত কোনো ভবনের বাইরে কোথাও রাত কাটানো পছন্দ করেন না।

“ট্রাম্প এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজের সোফায় বসে ভাল একটা চিসবার্গার খেতে ভালবাসেন,” তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং সাবেক এক উপদেষ্টা রজার স্টোন রয়টার্সকে বলেছিলেন। “তিনি নিজের বিছানায় ঘুমাতে পছন্দ করেন- তার জন্য তিনি যেখানেই যান না কেন নিজের ঘরে ফিরতে বাড়তি পথ পাড়ি দিতেও রাজি থাকেন। এমনও হয়েছে মাঝ-রাত পার হয়ে গেছে – কিন্তু তিনি নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে গেছেন।”

তার সবচেয়ে পছন্দের খাদ্য স্টেক এবং টমাটো কেচআপ। বার্তা সংস্থা এপি খবর দিচ্ছে সৌদি আরবে তার জন্য স্টেক আর টমাটো কেচআপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদিও অতিথির জন্য রাজপরিবার থেকে স্থানীয় খাবারও তৈরি রাখা হবে।

প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টনের পররাষ্ট্র বিষয়ক ভাষণ-লেখক ড্যানিয়েল বেনজামিন, বিমানবাহিনীর বিমানে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বহু সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন। তিনি বলছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এধরনের সফরগুলো খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।”

“প্রথমত এই সফরগুলো খুবই ঝটিতি ঘটে। আপনি যদি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের কাজের ধারা দেখেন, দেখবেন তিনি হুড়োহুড়ি পছন্দ করেন না। তিনি অনেক সময় নিয়ে টিভি দেখেন। কিন্তু এসব সফরে প্রচুর লোকের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতে হয়, প্রচুর কথা বলতে হয়। সবসময়ই চলার ওপর থাকতে হয়। ওটা তার স্টাইল নয়। ট্রাম্প কিছুটা অন্য মেজাজের মানুষ।”

প্রেসিডেন্টের সফর যারা আয়োজন করছেন তারা তাই সচেতনভাবে তার সময়সূচি এমনভাবে তৈরি করেছেন বলে খবর, যাতে তিনি বৈঠকের ফাঁকে ফাঁকে অনেক সময় হাতে পান। এবং যেসব বৈঠকে তিনি বক্তৃতা দেবেন সেগুলো এমনভাবে পরিকল্পনার সময় বলে দেওয়া হয়েছে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে পছন্দ করেন এবং অনেক ভিসুয়াল দেখাতে ভালবাসেন।

এই সফরে প্রেসিডেন্টের অন্যতম প্রধান একটি চ্যালেঞ্জ হবে সৌদি আরবে ধর্ম বিষয়ে তার বক্তৃতা । জানা গেছে তার উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার এই বক্তৃতাটির খসড়া করছেন। তিনিই ছিলেন মুসলিম দেশ থেকে আমেরিকায় ভ্রমণ বিষয়ে বিতর্কের মূল নায়ক।

অতীতে দেখা গেছে বিদেশ সফরের সময় আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা নানাধরনের অস্তত্বিকর ও বিব্রতকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। যেমন জজ ডাব্লিউ বুশ চীন সফরে এক সংবাদ সম্মেলনের পর তালামারা একটা দরজা দিয়ে বেরনর চেষ্টা করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন। ইরাকের এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে লক্ষ্য করে জুতো ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছিল।

তার বাবা জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ জাপানী প্রধানমন্ত্রীর কোলে বমি করে দিয়েছিলেন। প্রটোকল না মানার কারণে ঝামেলায় পড়েছিলেন বারাক ওবামা। জাপানি সম্রাট আকিহিতোকে কুর্নিশ করার জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন।

তার স্ত্রী মিশেল ওবামা ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথকে প্রথা ভেঙে আলিঙ্গন করে চরম অস্তত্বিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। জর্জ ডাব্লিউ বুশ জার্মান চান্সেলর অ্যঙ্গেলাকে ঘাড় মালিশ করেছিলেন যেটা মোটেও ভালভাবে নেওয়া হয়নি।

তবে ট্রাম্পের আয়োজক দল হয়ত তাকে এসব সম্ভাব্য ভুলভ্রান্তি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবে। ট্রাম্পের একটা সুবিধা আছে। তার বেশির ভাগ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই সফরে তার সঙ্গে থাকছেন আর থাকছেন তার স্ত্রী স্লোভেনিয়ায় জন্ম মেলানিয়া।

তিনি স্লোভেনিয়ায় জন্মেছেন, থেকেছেন ফ্রান্স আর ইটালিতে। কাজেই আমেরিকায় বাইরে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তার আছে। তবে সৌদি আরবের শীর্ষ বৈঠকে প্রায় ৩০টি দেশের সরকার প্রধান থাকছেন। তারা সবাই হয়ত তাকে কিছু না কিছু বলতে চাইবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনতে হবে। এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে থাকতে হবে।

যে কোন বিশ্ব নেতার জন্য এসব বৈঠক ক্লান্তিকর, কিন্তু অনভিজ্ঞ এবং সাধারণত অধৈর্য স্বভাবের ট্রাম্প নয়দিনের প্রথম সফর কীভাবে উতরবেন, বিবিসির সংবাদদাতা জোয়েল গান্টার বলছেন, সেদিকেই এখন তাকিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন মহল।