স্টিকার লাগিয়ে মাস্তানি করা সেই ব্যক্তি ‘ঢাবি শিক্ষক’ নন

ব্যক্তিগত গাড়ি ধাক্কা দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর সড়কে এক বাসচালকের সঙ্গে ক্ষমতার দাপট দেখানো ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক নন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি ঢাবির শিক্ষক নন। যদিও পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিকে নাজেহালের সময় তিনি ব্যবহৃত গাড়িটি ঢাবির শিক্ষকের গাড়ি বলে দাবি করেন। গাড়িতে শিক্ষক বসে আছে বলে হুমকি দিয়ে তিনি নিজেকেও একজন শিক্ষক বলে জাহির করেন।খবর জাগো নিউজের।

তিনি নিজেকে ‘রাস্তার মাস্তান নন’ দাবি করে আরও বলেন, ‘আমি এলাকার মাস্তান, ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্টিকার ব্যবহার করা গাড়িটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিনা- তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও নিজেকে শিক্ষক দাবি করা ওই ব্যক্তির প্রাইভেটকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টিকার ব্যবহার করা হয়েছে।

ওই ধরনের স্টিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্যবহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে গাড়ির স্টিকারগুলো ইস্যু করা হয়।

গতকাল শুক্রবার পঞ্চাশোর্ধ গাড়িচালক ওই ব্যক্তিকে নাজেহালের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে চারদিকে নিন্দার ঝড় ওঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাবির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হওয়া ওই ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেছেন।

শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে শিক্ষকের নাম ব্যবহার করে অপকর্মে লিপ্ত হওয়া ওই ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা ঢাবির স্টিকার ব্যবহার করে অন্য কেউ যাতে অপকর্ম করতে না পারে সে উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ওই ঘটনায় ঢাবির শিক্ষকরাও বিব্রত বোধ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গাড়িচালকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা ওই ব্যক্তি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে দাবি করেছে অনেকে। ফেসবুকে ওই শিক্ষকের ছবি পোস্ট করে তাকে ‘অভিযুক্ত’ বলছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।

তবে ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কে বা কারা না জেনে আমার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। যদিও ওই গাড়িচালককে লাঞ্ছনাকারী আমি ছিলাম না। আর আমার-তো প্রাইভেটকারই নেই। আমি মোটরসাইকেল ব্যবহার করি।

ঢাবির স্টিকার ব্যবহার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামুজ্জামান বলেন, ‘গাড়িতে ব্যবহারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারসমূহ রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে ইস্যু করা হয়। শিক্ষক ও কর্মকর্তারা নিজেদের যাবতীয় তথ্য দিয়ে স্টিকার নিয়ে থাকেন। এটি বাইরের কারও ব্যবহারের সুযোগ নেই। যদি এমন কোনো অভিযোগ আসে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুক্রবার রাতে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুখে দাড়িওয়ালা পঞ্চাশোর্ধ্ব গাড়িচালকের শার্টের কলার ধরে নাজেহাল করছেন কালো পাঞ্জাবি পরিহিত এক ব্যক্তি। তিনি ওই লোকের শার্টের কলার ধরে এদিক-সেদিক টানাটানি করে বলেন, ‘পুলিশ ডেকে তোকে মাইরা থানায় দিব, ঢাকা ভার্সিটির গাড়ি এটি। … শিক্ষক বসে আছে গাড়িতে, আমিও শিক্ষক। কোনো রাস্তার মাস্তান না, এলাকার মাস্তান আমরা। ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান। বুঝতে পারছোস। তুই গাড়িতে লাগাইছস। স্বীকার কর তুই লাগাইছিস। পায়ে ধইরা মাফ চা।’

পুরো সময় ধরে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিটি নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেও তাতে কান দেননি ‘শিক্ষক’ পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে পা ধরে মাফ চাইলে ওই ‘শিক্ষক’ বলেন, ‘যা এবার যা, সাবধানে গাড়ি চালাইবি। বুঝেশুনে গাড়ি চালাইবি।’

এরপর ওই ব্যক্তি নিজের গাড়িতে স্থান ত্যাগ করেন।