স্ত্রীকে ঘরের মেঝেতে পুঁতে টাইলস লাগালেন স্বামী

স্ত্রীকে খুন করে ভাড়াবাড়ির মেঝেতে পুঁতে তাঁর ওপর সিমেন্ট ঢালাই করে টাইলস বসিয়ে দিয়েছেন স্বামী। নির্মম এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে দুর্গাপুর থানার উত্তরপল্লী এলাকায়।

পুলিশ জানায়, নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ির মালিককে ফোন করে নিজের কীর্তির কথা জানান স্বামী। পরে বাড়ির মালিক পুলিশকে খবর দিলে মাটির প্রায় ছয় ফুট গভীরে খুঁড়ে ওই নারীর পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় স্বামী হায়দার আলী শেখকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বাড়ির মালিক পুলিশকে জানান, আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে হায়দার আলী শেখ নামের এক রাজমিস্ত্রিকে বাসা ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি। আট বছর আগে হায়দার রিনা বিবি নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। এ সময়ে তাঁদের দুটি সন্তানও জন্ম নেয়।

বাড়ির মালিক আরো জানান, বিয়ের পর হায়দার ও রিনার সম্পর্ক কেমন ছিল, তা তিনি জানতেন না। তবে হায়দার মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না বলেই তিনি জানতেন। কিন্তু গত শুক্রবার যখন হায়দার তাঁকে ফোন করে এসব কথা জানান, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান।

বাড়ির মালিক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে হায়দার তাঁকে ফোন করে বলেন, আত্মহত্যা করবেন তিনি। বাড়ির মালিক কারণ জানতে চাইলে ফোনে হায়দার জানান, স্ত্রীকে খুন করে ঘরের মেঝেতে পুঁতে চলে এসেছেন তিনি। তাঁকে না খুঁজতে বাড়ির মালিককে পরামর্শ দিন তিনি।

এরপর বাড়ির মালিক ওই রাতেই বিষয়টি দুর্গাপুর থানায় জানান। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। ঘরের মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় রিনার মৃতদেহ।

দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা জানান, ধারণা করা হচ্ছে, শাবলজাতীয় ভারী কিছু দিয়ে পিটিয়ে রিনাকে হত্যা করা হয়। মৃতদেহে দ্রুত পচন ধরাতে গর্তের ভেতর প্রচুর আলু রাখা হয়েছিল। এই ভাড়া বাড়িতে আর কেউ থাকত না। গলির মধ্যে বাড়ি হওয়ায় ভেতরে কী হচ্ছে, তা বাইরে থেকেও বোঝা যেত না।

দুর্গাপুরের ডিএসপি (পূর্ব) অভিষেক মোদি বলেন, রিনা বিবিকে খুন করে মেঝের মাটিতে পুঁতে দেওয়ার পর সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে ঢেকে দেওয়া হয়। তারপর সিমেন্টের ওপর টাইলস বসিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, রিনা বিবির মৃতদেহ পাওয়ার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর স্বজনরা। নিহত রিনার ভাই জাভেদ জানান, বিয়ের পর থেকে হায়দার তাঁর বোনের ওপর নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালাতেন। এর ফলে রিনা বেশ কয়েকবার তাঁর বাপের বাড়িতেও চলে যান। কিন্তু হায়দার বারবার অনুরোধ করে রিনাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।

গত বুধবার রিনা স্বামীর বাড়িতে ফিরে যান। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। এর পর থেকে রিনার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানান জাভেদ।

এদিকে, মৃতদেহ উদ্ধারের পর শনিবার বিকেলে রিনার স্বামী হায়দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।