স্ত্রীর ‘ভয়ঙ্কর অভিযোগ’ যা বললেন ক্রিকেটার শহীদ

আমার পেটে তখন আমাদের মেয়ে। ওই অবস্থায় শহীদ আমাকে লাথি মারতো,’ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বাইরে থাকা পেসার মোহাম্মদ শহীদের স্ত্রী ফারজানা আক্তার এরপর আর কথা বলতে পারেন না। বেশ কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে ফোনের ওপার থেকে ধরা গলায় বলে ওঠেন, ‘ও আমাকে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করতো।’

স্ত্রীর এমন অভিযোগকে শহীদ বানোয়াট বলছেন। তার দাবি, ‘যা হয়েছে তার চেয়ে ও বেশি বলছে। আমার স্ত্রীর বোনের জামাই হিংসা করে এসব রটাচ্ছে। লোকে আমাকে বড় ক্রিকেটার বলে, এটা তার সহ্য হয় না।’

নারায়ণগঞ্জ থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার মোহাম্মদ শহীদ। পরিশ্রমী পেসার হিসেবে তার বেশ সুনাম। একটানা বল করতে তার জুড়ি মেলা ভার। তাকে আলোতে আনার পেছনে বাংলাদেশ দলের সাবেক পেসার মোহাম্মদ শরীফের অবদান অনেকখানি। ট্রায়াল থেকে এই শরীফই শহীদকে বাছাই করেন। ওই সময় শহীদের পারিবারিক অবস্থা অতটা ভালো ছিল না। ফারজানা বলছেন, সেই দিনগুলোতে শহীদ তাকে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু সমস্যা হয় জাতীয় দলে ঢোকার পর।

‘আমার যখন বিয়ে হয়, তখন ওরা আমাকে রুপার অলঙ্কার দিয়েছিল। সোনার গয়না কেনার মতো সামর্থ্য ওদের ছিল না। বিয়ের প্রথম দুই বছর আমরা সুখেই ছিলাম। সেই শহীদ এখন একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করে। আমার মেয়েকে অস্বীকার করতে চায়। ও বলে এই মেয়ে নাকি ওর না!’

‘আমার দুইটা বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এখনো ওর সংসার করতে চাই। ডিএনএ টেস্ট করে দেখা হোক এই মেয়ে কার। কাল রাতে (মঙ্গলবার) ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে যেতে বলে। আবার হুমকিও দেয়। বলে সব ক্ষমতা আমার। তোরা দুই লাখ টাকা ভাঙলে আমি দুই কোটি ভাঙবো।’

শহীদ বলছেন, ‘আমি মেয়েকে অস্বীকার করবো কেন? মেয়ের বয়স ১১ মাস। অস্বীকার করলে এতদিন থাকতে পারতো?’

স্ত্রীর সঙ্গে শহীদের সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর ধরে ভালো নয়। প্রায় বছরখানেক আগে ফারজানার এক আত্মীয় এই প্রতিবেদককে শহীদের বিষয়টি জানান। তখন তারা শহীদকে বুঝিয়ে ‘পথে আনা’র চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করতেও অনুরোধ করেন।

ফারজানার ওই আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দিনকে দিন শহীদের আচরণ চূড়ান্ত খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফারজানা আর তার এক ছেলে, এক মেয়ের কোনও খরচ সে দেয় না। আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।’

শহীদের স্ত্রী জানান, স্বামীর বাড়িতে তাকে দুইতলায় রাখা হয়। শহীদ থাকেন নিচতলায়। শ্বশুর, শাশুড়ি আর ননদও তাকে মানসিক নির্যাতন করেন, ‘আমাকে যেদিন লাথি মেরেছিল, সেদিন ওর পায়ে ধরে এক হাজার টাকা নিয়ে মহিলা ডাক্তারের কাছে যাই। প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। ওরা মা, বোনও ওর হয়ে কথা বলে।’

ফারজানার দাবি শহীদের মা তাকে জানিয়েছেন শহীদ এখন যে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করেন, সেই মেয়ে গর্ভবতী, ‘আমার শাশুড়ি ওই মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন। ওই মেয়ে নাকি গর্ভবতী, তাই শহীদকে চাপ দিচ্ছে।’

‘আমার ননদ আমাকে বোঝায়। সে বলে হিন্দুরা টাকা হলে করে বাড়ি। আর মুসলমানরা টাকা হলে বিয়ে করে। তুমি মেনে নাও,’ কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন ফারজানা। নিজেকে সামলে আবার বলেন, ‘আমি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে যাবো। তিনি তো কারো বাবা। নিশ্চয়ই আমার কষ্ট বুঝবেন। সঠিক বিচার করবেন।’

ইতিমধ্যে কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। শহীদ বিসিবির কারো সঙ্গে পরামর্শ করেছেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘‘সুজন ভাইকে (খালেদ মাহমুদ সুজন) ফোন দিয়েছিলাম। উনি বলেছেন, ‘বড় পত্রিকা কিংবা টিভিতে নিউজ হয়েছে?’ আমি বলেছি না। তারপর উনি বললেন, ‘তাহলে চুপ থাক।’’’

ফারজানার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শহীদকে তারা সাতদিনের সময় দিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুইদিন চলে গেছে। বাকি দিনগুলোতে শহীদ ‘পথে না আসলে’ থানায় মামলা করবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিবেন। শহীদকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে তার হাতে সময় সাতদিন।-চ্যানেল আই