হঠাৎ ধসে বিপদে বাংলাদেশ

তামিম ইকবাল বেশ মজবুত একটা ইনিংস গড়ে তুলেছিলেন। এমন ম্যাচে একজন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি মানে জয়টা সহজ হয়ে যাওয়া। সাব্বির রহমানের সাথে ইনিংস মেরামত করে সেদিকটাতেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ড্যাশিং ওপেনার। কিন্তু স্পিনার মিচেল স্যান্টনারকে মারতে গিয়ে ভুলটা হয়ে গেল। বেনেট ছুটে এসে ক্যাচটা নিলেন দারুণভাবে। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৬ রান তোলার পর উইকেট হারালো টাইগাররা। ৬৫ রান করে বিদায় তামিম। এক ওভার পরই মোসাদ্দেক হোসেনের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট সাব্বির (৬৫)। একি কাণ্ড! ডাবলিনে বুধবার ২৭১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ছোটা টাইগাররা যে বড় একটা ধাক্কা খেল!

ধাক্কার কি দেখেছে বাংলাদেশ? সাব্বির হয়েছেন স্যান্টনারের দ্বিতীয় শিকার। পরের ওভারেই জিতান তার দ্বিতীয় শিকার করেছেন মোসাদ্দেককে (১০)। ১ উইকেটে ১৪৩ থেকে দেখতে না দেখতেই টাইগাররা ১৬০ রানে ৪ উইকেট হারানো দল! মানে ১৭ রানের মধ্যে নেই মূল্যবান ৩ উইকেট। এমন আহামরী কোনো বোলিংয়ের কারণে নয়। নিজেদেরই কারণেই এই সর্বনাশ ডেকে আনা। এই প্রতিবেদন লেখার সময় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের স্বপ্ন তাই পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে শুরু করেছে। ৩০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬১ রান টাইগারদের। ক্রিজে অভিজ্ঞ কিন্তু একেবারে নতুন দুই ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম। দুজনই ১ রান করে নিয়ে দাঁড়িয়ে।

ধাক্কা দিয়েই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস। তামিম প্রথম বলেই স্পিনার জিতান প্যাটেলকে ছক্কা হাঁকিয়ে মেজাজটা বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় বলে জিতানকেই তুলে দিয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরেন শেষ দুই ম্যাচে ফিফটি করা সৌম্য সরকার। দলের ৭ রানে ওই উইকেট পতনের পর তামিম-সাব্বির জুটিতে ২৬.৩ ওভার খেলে বাংলাদেশ। কিউই বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে দলকে তারা নিয়ে যান ১ উইকেটে ১৪৩ পর্যন্ত।

কিন্তু ওখানেই গোত্তা খেতে হয়। ৫ রানের মধ্যে দুই সেট ব্যাটসম্যান আউট। সাব্বির যদি একটু আগে ব্যাট নামাতেন তাহলে ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমোশন পাওয়া মোসাদ্দেককে ফিরতে হয়। কিন্তু ভাগ্যটা খারাপ সাব্বিরেরই। সাথে বাংলাদেশেরও কি না সেটা এখন প্রশ্ন। দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলার পর ৩ উইকেটে ১৪৮ থেকে নতুন করে শুরু করতে হয়েছিল। মোসাদ্দেক এলবিডাব্লিউর শিকার হলে আরো শুরু থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের।

এর আগে ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে মাশরাফি বিন মুর্তজা টস জিতে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডকে। ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচ। আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ। নিউজিল্যান্ড যেখানে চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করেছে আগেই। বাংলাদেশ রানার্স আপ। আর এই ম্যাচের চতুর্থ বলেই আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথামের দেওয়া সহজ ক্যাচ মিস করলেন নাসির হোসেন। মাশরাফি ছিলেন বোলার। চতুর্থ ওভারে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান তুলে নেন অন্য ওপেনার লুক রনকির (২) উইকেট। কিন্তু এরপর ২৪.৩ ওভারের হতাশা। একটাও উইকেট মেলে না। সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান ল্যাথাম।

নাসির প্রায়শ্চিত্ত করেন তার পর। পর পর দুই ওভারে তিনি তুলে নেন নেল ব্রুম (৬৩) ও ল্যাথামের (৮৪) উইকেট। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৩ রানের জুটি গড়া ব্রুম ও ল্যাথামের বিদায়ের পর চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। টাইগার বোলাররা ম্যাচে ফিরতে থাকেন। রানের গতি কমতে থাকে। ১ উইকেটে ১৫৬ রানের নিউজিল্যান্ড হয় ১৬৭ রানে ৩ উইকেট হারানো দল।

৩৯ থেকে ৪৪তম ওভারে সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা খেলাটাকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেন। এই সময়ের মধ্যে ২টি করে উইকেট নেন তারা। ২২৬ রানে ৭ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। কোরি অ্যান্ডারসন, কলিন মুনরোর মতো ব্যাটসম্যানরাও তেমন কিছু করতে না পেরে ফেরেন। তাদের দলের বড় স্কোর গড়ার আশা ওখানেই শেষ।

তারপরও অভিজ্ঞ রস টেলর (অপরাজিত ৬০) এক প্রান্ত ধরে রেখে খেলে যান। তার ব্যাটে ভর করেই কিউইদের ইনিংসের শেষটা এগিয়েছে। লড়ার মতো রান মিলেছে তাদের। বাংলাদেশি ফিল্ডাররা কয়েকটি সুযোগ মিস করেছেন। তারপরও বোলাররা যেভাবে লড়েছেন তাতে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে দল। ব্যাটসম্যানরা পেয়েছেন জয় করার মতো একটি টার্গেট। কিন্তু সেটাই না কঠিন হয়ে ওঠে এবার!

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নিউজিল্যান্ড : ২৭০/৮ (ল্যাথাম ৮৪, ব্রুম ৬৩, টেলর ৬০*, অ্যান্ডারসন ২৪, প্যাটেল ৭*, নিশাম ৬, হেনরি ৫, রনকি ২, মুনরো ১, সান্টনার ০; সাকিব ২/৪১, নাসির ২/৪৭, মাশরাফি ২/৫২, মোস্তাফিজ ১/৪৬, রুবেল ১/৫৬, মোসাদ্দেক ০/১৪)।