হঠাৎ পেট খারাপ, যেভাবে কমে যাবে

রমজানে সারা দিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারিতে তেলে ভাজা খাবার খাওয়া হয়। ইফতারিতে এসব খাবার আমরা বেশ আগ্রহ নিয়ে মজা করে খেয়ে থাকি।

কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে ঠিক তখনি যখন অতিরিক্ত তেল মসলা সহ্য করতে না পেরে পেট খারাপ বা পেটের অসুখ দেখা দেয়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ইফতারে তৈলাক্ত ও অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার, রাস্তার পাশে খোলা খাবার, বিভিন্ন আকৃষ্ট পানীয় যেমন- কাটা ফল, আমের রস ইত্যাদি আমরা খেয়ে থাকি। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে পেট খারাপ হয় এবং পেটে যন্ত্রণার সঙ্গে বারবার টয়লেটে যাওয়ার চাপ আসে।

এছাড়া আরও অনেক কারণে এমন হঠাৎ করে পেট খারাপ হতে পারে যেমন: ফুড পয়েজেনিং, সংক্রমণ, অ্যালার্জি, প্রচুর পরিমাণে খাবার খেয়ে ফেলা, স্ট্রেস, অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান, মোশান সিকনেস, কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ মানুষই হাতের কাছে ওষুধের দোকানে ছুটে যান এবং অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কিনে সেবন করে তবেই শান্তি পান।

এবার থেকে আর এমন কিছু করার দরকার পরবে না। আপনার রান্নাঘরে উপস্থিত কিছু ঘরোয়া উপাদানের সাহায্যেই পেট খারাপ রোগ সেরে যাবে।

চলুন তাহলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

আদা: পেট খারাপ কমাতে আদা দারুন কাজে আসে। কারণ এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ এ ধরনের রোগ সারাতে সাহায্য করে।

আপেল সিডার ভিনিগার: পেট খারাপ হলে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে থাকা প্যাকটিন নামে একটি উপাদান যন্ত্রণা কমানোর পাশাপাশি পেটকে একেবারে চাঙ্গা করে তোলে। ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নিন। প্রতিবার খাবার খাওয়ার পরে ১ গ্লাস করে এই পানীয় পান করলে দারুণ উপকার পাবেন। ইচ্ছা হলে এ মিশ্রণে অল্প করে মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন।

দই: পেট খারাপ হলে এক বাটি টক দই খেয়ে নেবেন। তাহলেই বারবার আর টয়লেট ছুটতে হবে না। টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণে ল্যাক্টোব্যাসিলাস (ভালো ব্যাক্টেরিয়া) থাকে যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি পেট খারাপ সমস্যা কমাতে দারুন কাজে আসে। পেট ভালো না হওয়া পযর্ন্ত দৈনিক ২-৩ কাপ টক দই খেতে হবে।

কলা: শুধু পেট খারাপ নয়, যে কোনও ধরনের পেটের রোগ সারাতে ফল দারুণ কাজ করে। কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্যাকটিন, যা পটিকে শক্তি করতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই সঙ্গে পেট খারাপের প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ১ গ্লাস বাটার মিল্কে ১টা কলা চটকে নিয়ে মিশিয়ে নিন। তারপর এ মিশ্রণটি দিনে ২-৩ বার করে খান। এতে আরাম পাবেন।

মেথি: ১ চামুচ দইয়ের সঙ্গে ১ চামুচ মেথি মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার খেতে হবে। তাহলেই পটি পরিষ্কার হতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে পেটে যন্ত্রণা এবং বদহজমও কমে যাবে। মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাসিলেজ নামে একটি উপাদান, যা বারে বারে পটি হওয়ার আশংকা হ্রাস করে।

দারুচিনি: এটি আপনার হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, সেই সঙ্গে পেট খারাপের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ সমস্যায় দিনে ৪ বার দারচিনি পাউডার দিয়ে চা তৈরি করে খেলে উপকার পাবেন। ১ কাপ গরম পানিতে ১ চামচ দারুচিনি পাইডার মিশিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিন। সময় হয়ে গেলে এই চা পান করুন। দেখবেন পেটের রোগ সেরে গেছে।

মৌরি: আমরা কম-বেশি প্রায় সবাই জানি মৌরি পেট ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে। কিন্তু জানেন কি? এই প্রাকৃতিক উপাদানটি পেট খারাপের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে? অসলে এতে উপস্থিত অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রপাটিজ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

১ কাপ গরম পানিতে ২ চামুচ মৌরি মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। পরে পানিটা ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এ মিশ্রণটি দিনে ২-৩ বার পান করলেই দেখবেন সমস্যা কমতে শুরু করেছে।

হলুদ: ১ কাপ বাটার মিল্কে হাফ চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পান করুন। এই পানীয়টি দিনে ৩-৪ বার পান করলেই দেখবেন সমস্যা কমতে শুরু করেছে।

সাবধানতা: যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা ভুলেও এসব ঘরোয়া পদ্ধতিটি কাজে লাগাবেন না।