হরর ছবি দেখে আমরা ভয় পাই কেন?

ভয়ের ছবি দেখে ভয় পাবো না, এ আবার কেমন কথা। অনেকেই বীরত্ব দেখিয়ে বলেন, ‘একজরসিস্ট’ বা ‘ওমেন’-এর মতো ছবি দেখে তিনি ভয় পাননি। এতে তাঁর ইগোর বেলুন ফুলে টইটই করে ঠিকই, কিন্তু এটা যে কোনো কাজের কথা নয়, তা সেই বীরপুরুষকে বোঝানো দায়। হরর ছবির শর্তই হল ভয় পাওয়া। পরিচালক দর্শককে ভয় পাওয়াতেই এমন ছবি তুলেন। আর দর্শকও জেনে বুঝেই এই ছবি দেখতে যায়। হ্যাঁ, অনেক সময়ে কাঁচা নির্মাণের কারণে হরর ছবি দেখলে হাসি পায় বটে, কিন্তু সেটা তো পরিচালকের অভিপ্রায় ছিল না! তিনি ভয় পাওয়াতেই চেয়েছিলেন। ভয় পাওয়াটাই সংগত, এমনটাই জানিয়েছেন জাপানি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিত্রনাট্যকার কেন মিয়ামোতো।

কেন কেবলমাত্র এজন চিত্রনাট্যকার নন। তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি ব্লগার হিসেবে। তাঁর এক সাম্প্রতিক ব্লগে কেন জানিয়েছেন হরর ছবি সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা। কেনের মতে, হরর সিনেমায় বেশ কিছু সাধারণ বিষয় থাকে, যা দর্শককে ‘ভয়’ নামক অনুভূতিটির দিকে নিয়ে যায়। এখানে রইল কেন-উল্লিখিত কারণগুলির মধ্যে থেকে ৫টি।

• প্রথমেই যে কারণটিকে কেন চিহ্নিত করেছেন, সেটা ‘অজ্ঞাত’ থেকে ভয়। উদাহরণ স্বরূপ তিনি ‘জ্যস’ ছবিটির কথা বলেছেন। এই ছবির প্রথম সিকোয়েন্সেই এক শান্ত পরিমণ্ডল এমন ভাবে ভেঙেচুরে যায় হাঙরের অতর্কিত আক্রমণে, যে আতঙ্ক সেখান থেকেই শুরু হয়। কিন্তু দর্শক সেই দৃশ্যেই জানতে পারেননি, সেটা হাঙরের আক্রমণ। এই ‘অজ্ঞাত’-ই তৈরি করে হরর-কে, জানাচ্ছেন কেন।

• হরর ছবির আর একটি মশলা অনুমান বা আন্দাজ। চিত্রনাট্য থেকেই দর্শক আন্দাজ পান, এবারে ভয়ের কিছু একটা ঘটতে চলেছে। বাংলা ছবি মনে করুন, ১৯৭১ সালের বাংলা থ্রিলার ‘কুহেলি’-তে একটা গান ছিল— ‘আসছে, সে আসছে’। এই ভাবটাই ফিরে ফিরে আসে হরর ছবিতে। এই আতঙ্কের আগমনই ঘনিয়ে তোলে ভয়কে, জানিয়েছেন কেন।

• হরর ছবির একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে ‘চেজ’ বা ধাওয়া করার দৃশ্যে। ভয়ের এলিমেন্টটি নায়িকা বা কখনও কখনও নায়ককে তাড়া করেছে, এমন সিকোয়েন্স ভয়কে বাড়িয়ে তোলে। প্রায়শই এই ‘চেজ’ সিকোয়েন্সটি দাঁড়ায় লুকোচুরির মতো। নায়ক বা নায়িকাকে ঘপ করে ধরার জন্য ভূতবাবাজি ছলাকলা কছেন, তা হামেশাই দেখা যায়। কখন কোথা থেকে ঘাড়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়বেন, তা কেউ জানে না। এমতাবস্থায় ভয় না পেয়ে কোনও উপায় নেই।

• হরর ছবির আর একটা অনিবার্য উপাদান দর্শকের মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ফোবিয়াগুলিকে খোঁচানো। হিচককের ‘দ্য বার্ড’ বা ‘ভার্টিগো’ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পোকামাকড় থেকে ভয় তো আকছার দেখা যায় হলিউড হরর-এ। স্টিফেন কিংয়ের উপন্যাস থেকে তৈরি সাম্প্রতিক ছবি ‘ইট’-এর উপজীব্য ক্লাউন থেকে ভয় বা ‘কারলোফোবিয়া’।

• হরর ছবির অন্যতম কেরদানিই হল তার লোকেশন। ভূতুড়ে বাড়ি বা গোলমেলে জঙ্গল অবশ্যই ভয়ের কারণ। কিন্তু লোকেশনের সঙ্গে লেপ্টে থাকতে হবে অন্ধকার। আলো নয়। , বরং অন্ধকারকে ব্যবহার কারাটাই হরর ছবির পরিচালকদের কাছে চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এই অন্ধকারই সম্ভব করে তোলে বাকি এলিমেন্টগুলোকে, জানিয়েছেন কেন। সূত্র: এবেলা।