হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে সরকার: সংসদে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার ‘লিভ টু আপিল’ করবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

সোমবার জাতীয় সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে আনা একটি বিল উত্থাপনের সময় আপত্তির জবাব দিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল-২০২২ সংসদে তোলার বিষয়ে স্পিকারের অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আপত্তি করেন। তবে তার আপত্তি সংসদের ভোটে খারিজ হয়ে যায়।

হারুন বলেন, এই আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একটি রায় হয়েছে। তাই এই আইনটি অকার্যকর। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিশেস সুবিধা দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে যায় না। যারা অপরাধ করবে তাদের কী আইনের আওতায় আনা হবে না- এমন প্রশ্ন রেখে হারুন বলেন, আগে এই আইনে যেসব অসঙ্গতি আছে সেগুলো দূর করতে হবে।

জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আইনে কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায়মুক্তি নেই। সরকারি কর্মচারিরা যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সেজন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশের আইনে এই বিধানটি আছে। সিআরপিসির ১৯৭ ধারাতেও এটি আছে। এ বিষয়ে আমরা লিভ টু আপিল করব।

গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট একটি রায়ে ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান ‘বেআইনি’ ঘোষণা করে। রায়ে আদালত বলেছে, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ওই ধারা ‘সংবিধান পরিপন্থি এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি’।

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারের এক গেজেটে ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হয়।

আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়, “কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেফতার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।

নানা মহলের সমালোচনার মধ্যে আইনের এ ধারা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে হাই কোর্টে আবেদন করে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।

প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২১ অক্টোবর রুল জারি করে হাই কোর্ট। সরকারি চাকরি আইন- ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল করা হবে না এবং এ ধারা সংবিধানের ২৬(১) ও ২৬(২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এ সরকারি কর্মচারী গ্রেফতারে পূর্বানুমতি সংক্রান্ত ধারা ৪১(১) ও ৩ চ্যালেঞ্জ করে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান আরেকটি রিট আবেদন করেছিলেন। তার প্রাথমিক শুনানির পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। এটি হাইকোর্টের আরেক বেঞ্চে বিচারাধীন।