হাতিদের সঙ্গে কথা বলা এক কিশোরী!

চৌদ্দ বছর বয়সেই তিনি রীতিমতো ক্ষুদে সেলিব্রেটি। নির্মলা টোপ্পো নামের এই কিশোরী এখন ‘লেডি টার্জান’ খ্যাতি অর্জন করেছে। এক রাতে গহীন অরণ্য থেকে শিল্পনগরী রাউরকেল্লায় এক পাল হাতি ঢুকে পড়ে। শুরু হয় আতঙ্ক। বনবিভাগের কর্মকর্তাদের ভাষায় এবার নির্মলা সত্যিকারের ‘বংশীবাদকের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো নির্মলা হাতির পালটি জঙ্গলে ফিরিয়ে নিলে শহরবাসী স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে। হাতির পালকে পথ দেখিয়ে বনভূমিতে ফিরিয়ে নিতে মেয়েটিকে অনেক মাইল হাঁটতে হয়েছে। এতে তার পায়ে ফোস্কা পড়ে যায়। ফোস্কা থেকে পরে তার সেপটিক হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিবিসি হিন্দি সার্ভিসের সঙ্গে কথা হয় তার। সে জানায়, পায়ের ইনফেকশন এখন সেরে গেছে। ঘা প্রায় শুকিয়ে গেছে। স্থানীয় রেড ক্রস সোসাইটি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।

হাতির পালকে তাড়াতে রাজ্যের বনবিভাগের কর্মকর্তারা অনন্যোপায় হয়ে নির্মলার শরণাপন্ন হন। মেয়েটি এসেছে পার্শ্ববর্তী ঝাড়খন্ড থেকে। বন কর্মকর্তা পিকে ঢোলা বলেন, হাতির পাল শহরে ঢুকলে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি একে নিয়ন্ত্রণ করতে। পালে ছিল দুটি বাচ্চাসহ ১১টি হাতি। আমরা কোনো রকমে হাতির পালটি শহরের ফুটবল স্টেডিয়ামে ঢোকাতে সক্ষম হই। কিন্তু এরপর কিভাবে এদের বনে ফিরিয়ে নেব তা আমাদের জানা ছিল না। অগত্যা বন বিভাগ নির্মলার শরণাপন্ন হয়।

ঢোলা বলেন, আমরা জানতাম ঝাড়খন্ডে এক উপজাতীয় মেয়ে আছে যে হাতিদের ভাষা বোঝে। হাতির পাল তাড়াতে সক্ষম সে। আমরা তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সে তার গ্রাম থেকে কয়েকজন উপজাতীয়কে নিয়ে হাজির হয়। রাজ্য সরকার মেয়েটিকে তার এ অসাধ্য সাধনের জন্য অর্থ প্রদান করেছে।

নির্মলার নিজের ভাষায়ই শোনা যাক সেদিনকার সেই কাহিনী। সে জানায়, ‘আমি আমাদের উপজাতীয় মুন্ডারি ভাষায় হাতিদের সঙ্গে কথা বলি এবং বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের বনে ফিরিয়ে নিয়ে যাই।’ নির্মলা আরো জানায়, প্রথমে আমি প্রার্থনা করি। তারপর হাতির পালের সঙ্গে কথা বলি। ওদের বলি, এটা তোমাদের বাড়ি নয়। তোমাদের উচিত নিজেদের এলাকায় ফিরে যাওয়া। ওরা ঠিকই বুঝেছে আমার কথা।

রোমান ক্যাথলিক এই বনকন্যার মা মার যায় হাতির পালের আক্রমণে। তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয় হাতিকে বশ মানানো তার শিখতে হবে। এ কাজে তাকে সহায়তা করে তার বাবা এবং সঙ্গে থাকে একদল উপজাতীয় বালক।