হালিমের মুঠোফোনে পিয়াসার মেসেজ!

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাতের সংসার ভাঙার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিম। সাফাতের সাবেক স্ত্রী উপস্থাপিকা ফারিহা মাহাবুব পিয়াসার সংসার ভাঙতে কূটকৌশল করেন এই নাটের গুরু নাঈম। কৌশলের অংশ হিসেবে সাফাতের কাছে নাঈম নারী সরবরাহ করতেন। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান সাফাতের চোখ যেখানেই যেত, তাই সংগ্রহ করে দিতেন এই নাঈম।

বুধবার (১৭ মে) রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে ধর্ষক নাঈম ওরফে হালিমকে গ্রেপ্তারের পর তার মোবাইল থেকে বেশ কিছু এসএমএস বার্তা উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। এসব এসএমএস বার্তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাফাতের সাবেক স্ত্রী পিয়াসা আগে থেকেই নাঈমকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু উত্তরে নাঈম তেমন কিছুই লিখেননি।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) নাঈমের মোবাইল ফোন ও একটি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষা করে বেশ কিছু অপকর্মের তথ্য উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দাদের ধারণা, তার এসব ডিভাইস অধিকতর ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে আরও ছবি, ভিডিও, এসএমএস বার্তা উদ্ধার করা যাবে।

সূত্রমতে, মার্চ মাস থেকে একের পর এক নাঈমের মোবাইলে এসএমএস পাঠান পিয়াসা। বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনার পর পালিয়ে বেড়ায় নাঈম। এমনকি তার মোবাইলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য তিনি মুছে ফেলেন। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদন্তের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনায় সব ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হলো না।

নাঈমকে পাঠানো পিয়াসার এসএমএস বার্তায় সাফাত-পিয়াসার সংসার ভেঙে যাওয়ার অভিমান ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। এক বার্তায় নাঈমকে উদ্দেশ করে পিয়াসা লিখেছেন, ‘বেঈমানির শাস্তি দুনিয়ায় পেতে হয়। বিয়ে করে বউকে কেউ এভাবে ফেলে দেয় না। তার কোনো চিন্তা আছে আমি কী খাবো, কীভাবে চলবো, কীভাবে থাকবো, সে কি ভালোবেসেছে আমাকে? কত বড় বেঈমান, আমার সব কিছু দিয়েছি তাকে। আমার থেকে সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে সে (সাফাত)। এখন তোর মত.. (অপ্রকাশ্য) কথায় উঠে বসে। তোর কথায় চাকরগিরি করে। এ রকম স্বভাব হলে আগে বলতো, মিশাইতাম না কারো সঙ্গে। আমার সব ফ্রেন্ড, ভাই-ভাবি সব কিছু নষ্ট করছে। আজকে দেখ তুই ওর রেপুটেশনই নষ্ট করে ফেলছোস। গেম আমাকে নিয়ে খেলিস না.. খবরদার নাঈম। তোর মিচকা শয়তানি বুদ্ধি আমি ভালো করে বুঝি।’

নাঈমকে উদ্দেশ করে পিয়াসা আরো লিখেছেন, ‘তোর বন্ধুকে তুই খুব আলোর পথ দেখাইছোস। ওর ইজ্জত এই সমাজে আমি অনেক সেক্রিফাইস করে বানাইছি। এইটা নিয়ে খেইলো না। সব খারাপ মেয়েদের সঙ্গে পিকাসোতে বইসা ফাতরিমা কর। মেয়েদের নাম্বার খুঁজে ওকে (সাফাত) দেয়াও এই ধরনের ছেলেও না (পিয়াসার বিশ্বাস ছিল)। আল্লাহ যদি থাকে, এটার জবাব আমি একদিন তোমাকে দিবো। মিডিয়া আমার কন্ট্রলে ছিল। মনে কর না যে আজকে মিডিয়াতে নেই, আমার পাওয়ার নেই। আমার মিডিয়াতে দৌড় কতদূর এটা সাফাত এবং একজনও ভালো করে দেখে নাই। ওকে নিয়া খেলা বন্ধ কর। সাফাতের মাথা ঠিক নাই। নষ্ট মেয়েদের চিনলে দুনিয়া চেনা হয় না।’

সাফাতের বিপথে যাওয়ার জন্য নাঈমকে দায়ি করে পিয়াসা আরো লেখেন, ‘তোমার কাছে কোনো উত্তর নেই নাঈম। আমি নেই দেখে তুমি এটার সুযোগ নিবা আমি জানতাম না। বাসায় গিয়া আরো উল্টা প্যাঁচ লাগায় আসছো। আমি বুঝছি তুমি আমাদের মাঝে আরো প্যাঁচ লাগায়া সাফাতের মাথা নষ্ট করতেছো। ওর রেপুটেশন তুমি খারাপ করতেছো। ওর লজ্জা করে না। তোমাকে বলতে ও দেখা করতে চায় (৮ মার্চ তালাক নোটিশের পর)। আবার মেসেঞ্জারে হায়ও দেয়। তুমি দালালি ঠিকই করতোছো নাঈম। সাফাত নিয়া খেইলো না। ওকে বইলো আমার হাসবেন্ড (স্বামী) হিসেবে ওকে যে সম্মান দিয়েছি, সবাই ভাইয়া ভাইয়া করত, এখন কি সে থাপ্পড় খাইতে চায়?’

পিয়াসা আরো লেখেছেন, ‘তুমি তমা মির্জার (বর্ণনা নেই তিনি কে) সঙ্গে কথা বলায় দাওনি? সাফাত এত নিচে নামছে যে তমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। ছি! ছি! ছি! তুমি দালাল, দালালি করতোছো ঠিকই। তমা মির্জা আমার হাত দিয়ে ওঠা। আজ সাফাত তার সঙ্গে একসঙ্গে উঠাবসা করতে চায়। ছি ছি এই তার দুনিয়ার আলো। আমি জানতাম না আমাকে আগে বলত। আমি হারুন আংকেলের বস্তি থেকে মেয়ে এনে ওকে ধরাই দিতাম। সাফাতকে বলবা তমা মির্জা আমার হাতে তৈরি।’

সাফাতকে কুপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য নাঈমকে দায়ি করে পিয়াসা আরো লেখেনচ, ‘তোমার কাছ থেকে আমি এইসব এক্সপেক্ট (প্রত্যাশা) করিনি নাঈম। এইসব প্রসটিটিউটদের সঙ্গে সাফাতকে তুমি ইনট্রডিউস (পরিচয়) করাইছো। সে সময় তুমি ভুলে গেছো আমি তোমার উপকার করেছি। মিডিয়ার সবাই আমাকে চিনে, এসব কথা তাড়াতাড়ি ছড়ায়। দেখো সাফাতের টাকা আছে, আমার মন আর আত্মা আছে। মেয়েদের দালাল হিসেবে পরিচিতি হচ্ছে। তমা মির্জার স্ট্যাটাসটা আজকে সাফাতের জন্য লিখে সাফাতকে বইলো ওর ইজ্জত কোথায় নামাইছে। লজ্জা থাকা উচিত। এটা একটা বদদোয়ার ফল। মিডিয়ার মেয়েদের চিনো নাই। পুলিশের দৌড়ানি খাইছিলা। মনে আছে, সাফাতকেও খাওয়াও। আমার জামাই নিয়ে খেইলো না। তোর মত ….(প্রকাশের মতো নয়) পোলা রাস্তাঘাটে মাইর খাস কী এমনি এমনি? তুই সাফাতের জীবন বরবাদ করে দিছোস। আমার সামনে জীবনে পড়িস না। তোরে আমি জুতা দিয়া পিটাবো। টাকার কুত্তা তুই। সাফাতের মাথায় তো কিছু নাই। তোর মত…(প্রকাশের মতো নয়) বানাইছে ফ্রেন্ড। শালা শুকুরের বাচ্চা।’

চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে নাঈমকে পিয়াসা আরো লেখেন, ‘আমার সঙ্গে নাটক করিস, সাফাতের সঙ্গে আরেক রকম। তুই যা খুশি তাই কর। আমার নাম যাতে তোর মুখে একবারও না আসে। জুতা দিয়া পিটাবো শালা গিরিংগিবাজ। সাফাতও খাক তোর থেকে লাথি। আরো নত কর যত পারোস। দরকার আছে ওর। আমি ভুল করছি যে ভালো জিনিস ভালো সমাজ, ভালো মানুষের সঙ্গে উঠাবসা করাছি এটার যোগ্য ও (সাফাত) ছিল না। তুই যেগুলো করতেছোস ও এগুলোর যোগ্য। কর তুই খেল ওরে নিয়া যত পারোস। তোর তো টাকার দরকার। ইউস করে ওরে ১৪ ঘাটের পানি খাওয়াও। ওর আক্কেল হোক।’

এসএমএস বার্তা প্রসঙ্গে সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিহা মাহবুব পিয়াসা বলেন, নাঈম হচ্ছে একটা ফটকাবাজ ছেলে। টাকার জন্য সে সব করতে পারে। সাফাতের সঙ্গে সংসার ভাঙার যত খেলা সব সেই খেলেছে।

নাঈম কোনো উত্তর দেয়নি-এসএমএস বার্তাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সে কি উত্তর দেবে, সেতো গিলটি (অপরাধী)। তার কাছে কোনো উত্তর নেই।