হিজড়া এ্যানীর প্রেমে নিঃস্ব এক যুবকের আজব প্রেমের অজানা কাহিনি!

‘হিজড়া এ্যানীকে আমি খুব ভালোবাসি। ও আমার স্ত্রী। আমরা কোরআন শপথ করে বিয়ে করেছি। তবে দুঃখ একটাই ওর জন্য আমি আমার ব্যবসা, সমাজ ও স্ত্রী-সন্তানদের (প্রথম সংসার) হারিয়েছি। তবুও ওকে আমি আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি। আমরা আমাদের সন্তান মরিয়মকে নিয়ে বাঁচতে চাই।’ কথাগুলো খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন রাজধানী শ্যামপুরের বাসিন্দা হিজড়া এ্যানীর স্বামী মিলন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন আজব প্রেমের অজানা কাহিনি। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে শ্যামপুর বরইতলায় হিজরা এ্যানীর ভাড়া বাসায় বিচিত্র এমন দম্পতির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। হিজড়া এ্যানীর স্বামী মিলনের বাড়ি বিক্রমপুর। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে কাঁচামালের ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে খুব সুখের সংসার ছিল তার। ২০০৮ সালে যাত্রাবাড়ীর আড়তে হিজড়া এ্যানীর সঙ্গে মিলনের প্রথম দেখা হয়। সর্বশেষ ওই বছরেই শ্যামপুর বরইতলার হিজড়া সংঘটনের নেত্রী ববির বাসায় দুজনের দ্বিতীয় বার দেখা হয়। দ্বিতীয় বারের দেখায় একে অপরকে ভালো লাগতে শুরু করে। মোবাইল ফোনে দুজনের কথা চলতো।

দিনে-রাতে সমানতালে ভালোবাসার গভীরে পৌঁছাতে থাকে দুজন। সর্বশেষ মিলন হিজড়া এ্যানীকে জীবনসঙ্গী করার প্রস্তাব দেয় এবং এ্যানীর সঙ্গে কোরআন শপথের মাধ্যমে সংসার শুরু করেন ২০০৮ সালের নভেম্বরে। কীভাবে শুরু প্রেমের শুরু এবং সংসার- জানতে চাইলে মিলন বলেন, আমি বুঝতে পারিনি কখন এতো ভালোবাসা তার জন্য হলো।

আমার পরিবার ও সমাজের কেউ এখনো পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি এমন কাজ করতে পারি। তাদের মতে, এ্যানী আমাকে জাদু-মন্ত্র করেছে। আমি ওকে (এ্যানী) বিয়ে করার পর আমার স্ত্রী এ বাসার ঠিকানা নিয়ে আমার সূত্রাপুরের বাসা থেকে স্ত্রী-ছেলে মেয়ে চলে এসেছিল। পরে আমার যাত্রাবাড়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমিতির কাছেও বিচার দিয়েছে আমার প্রথম স্ত্রী। সর্বশেষ যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী সমিতি আমাকে নিষিদ্ধ করেছে। মিলন আরো জানান, আমি ব্যবসায়ী ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।

আমার দশ লাখ টাকা লসও হয়েছে ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার কারণে। এখন আমি ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা হিসেবে কাজ করছি। আর শুধু এ্যানীকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি। আমার প্রথম স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার গ্রামের সমাজেও এখন আমি অঘোষিত নিষিদ্ধ মানুষ। গত ১০ বছর আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না।

শুধু এ্যানীকে ভালোবেসে। তবুও ওকে আমি অনেক ভালোবাসি। এ্যানী-মিলনের সংসারের বয়স ৯ বছর। এ্যানী গত বছর স্থানীয় স্বামী পরিত্যক্তা এক নারীর কাছ থেকে দত্তক নিয়েছে শিশু মরিয়মকে। মরিয়মকে নিয়ে ঝলমলে রৌদ্রজ্জল হিজড়া এ্যানীর সংসার। কেমন কাটছে সংসার জীবন? জানতে চাইলে হিজড়া এ্যানী বলেন, ভালো আছি ভাইয়া, আমার স্বপ্ন ছিল আমি সংসার করবো। করছি আল্লাহর রহমতে। এছাড়া আমি সন্তান নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সর্বশেষ আমরা বছর চারেক আগে ইন্ডিয়াতে গিয়ে টিউব শিশু নেয়ার প্লান করেছিলাম। সে যাত্রায় আর যাওয়া হয় নি।

অবশেষে গত বছর মরিয়মকে দত্তক নিয়ে আজ আমি সন্তানের মা। আমার আর চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু ও (মিলন) আমাকে ভুলে না গেলেই হয়, বলতেই অশ্রুসজল এ্যানীর কথা আটকে যায়। এবারের ঈদ কেমন কাটলো মরিয়মের জানতে চাইলে বলেন, মরিয়ম এবারের ঈদে ছয়টি জামা পেয়েছে। আমার বোনেরা দিয়েছে। ওর বাবা (মিলন) দিয়েছে আর আমিও একটি জামা কিনে দিয়েছি। মরিয়ম আমাদের সুখের সংসারের আলো। তৃতীয় লিঙ্গের সংসার হিসেবে হিজড়া এ্যানীর সংসার অনেকটা কাল্পনিক মনে হয়। স্থানীয়দের সবাই এ্যানীকে খুব ভালোবাসে। মরিয়মকেও দেখতে অনেকেই ছুটে আসে এ্যানীর বাসায়।

হিজড়া এ্যানীর জন্মস্থান রাজধানীর শ্যামপুরে। এ্যানীর বাবা-মায়ের পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে এ্যানী ছিল সবার আদরের মেঝো সন্তান। ছোটবেলায় এ্যানীর নাম ছিল মনির হোসেন কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ্যানীর শারীরিক পরিবর্তনে সবাই বুঝতে পারে মনির হোসেন তৃতীয় লিঙ্গের সন্তান। সেই থেকে মনির হোসেন আজকের হিজড়া এ্যানী।