হিথ্রো বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশের অফিস সেক্রেটারির পাস জব্দ

অনিয়মের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের হিথ্রো এয়ারপোর্ট অথরিটি লিমিটেড (হাল) সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমানের অফিস সেক্রেটারির পাস জব্দ করেছে। গত ২৯ জুন (সোমবার) এ ঘটনা ঘটলেও বিমানের দুই কর্মকর্তা তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এমনকি বিমানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গ্রাহক সেবাসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম জেবা খান। গত ২৯ জুন ঢাকা থেকে যাওয়া বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০০১ ফ্লাইটের এক যাত্রীর আমের ব্যাগ নিয়ে বের হলে ‘হাল’ কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয় এবং চ্যালেঞ্জ করা হয়। এ সময় তিনি অসংলগ্ন কথা বললে ‘হাল’ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে (জেবা খান) আটক করেন এবং তার নামে ইস্যু করা পাস জব্দ করেন।

৯ দিন আটক রাখার পর ২৯ জুন (সোমবার) দুপুরে শর্ত সাপেক্ষে যাত্রী জেবা খানের পাস ফেরত দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পাকিস্তানি বংশদ্ভুত বৃটিশ নাগরিক হওয়ায় তিনি কিছুটা ছাড় পেলেও অনেকাংশে বিমানের সুনাম নষ্ট করেছেন। এতে হিথ্রো বিমান বন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়াররাইন্সের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

এদিকে বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ও কান্ট্রি ম্যানেজারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় বিষয়টি এতোদিন গোপন রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। পাস না থাকায় কয়েকদিন এয়ারপোর্টে দেখা যায়নি জেবা খানকে। প্রথম কয়েকদিন অসুস্থতার কথা বলে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বিমানের হিথ্রো স্টেশন ম্যানেজার এজেএম আব্দুল্লাহ জাফরের লন্ডনের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এক সপ্তাহ পর তার পাস ফেরত দেয়া হয়েছে।

ঘটনার ৯ দিন পর পাস ফেরত দেয়া হয়েছে। এত বড় একটি বিষয় কেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়নি -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অামি বিষয়টি আমার কান্ট্রি ম্যানেজারকে জানিয়েছি।’

তবে এ বিষয়ে জানতে কান্ট্রি ম্যানেজারকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কঠিন নিয়মের মধ্যেও হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে জেবা খান কিভাবে অন্যের আমের ব্যাগ নিজের বলে নিয়ে যেতে চাইলেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এটি আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। আমি বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।

বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তাকে জানানোর দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট গ্রাহক সেবা বিভাগ পরিচালকের। এ প্রসঙ্গে গ্রাহক সেবা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আতিক সোবাহান বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো লিখিত চিঠি পাইনি। তবে মৌখিকভাবে একজনের কাছ থেকে শুনেছি।

বিভাগের শীর্ষ কর্তা হিসেবে বিষয়টি সবার আগে আপনার জানা দরকার ছিল কি না -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আমরা তদন্ত করে সত্য বের করার চেষ্ট করব। এবং জেবা খান দোষী প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর পরিচালনার পর্ষদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী বলেন, আমি কয়েকদিন দেশের বাইরে ছিলাম। যে কারণে বিষয়টি জানতে পারিনি। হিথ্রো এয়ারপোর্ট অথরিটি লিমিটেডের (হাল) নিয়ম-কানুন মেনেই বিমান এমপ্লয়িরা চলবে। যেহেতু পাস জব্দের বিষয় এসেছে, বিষয়টি তদন্ত করা হবে। কেউ যদি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এমন প্রমাণিত হয় অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।