হিলি দিয়ে ২ দিনেই এসেছে ৬ হাজার টন চাল

আমদানিকৃত চালের উপর থেকে শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশ করায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসতে শুরু করেছে চাল বোঝাই শত শত ট্রাক। বৃহস্পতিবার বিকেলে শুল্ক হ্রাসের চিঠি হিলি স্থলবন্দরে আসার সাথে সাথেই ভারতে অপেক্ষমাণ চাল বোঝাই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করে। আর শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দুদিনে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি হয়েছে ৬ হাজার মেট্রিকটন চাল।

চাল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার শুল্কহার কমাচ্ছে আগাম এমন সংবাদে হিলি স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে গত দুই সপ্তাহ ধরে শত শত ট্রাক চাল আটকে রেখেছিলো আমদানীকারকরা। ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় ছিল শুল্কহার কমিয়ে আনার নির্দেশ আসার পর এসব চাল বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।

সরকার আমদানিকৃত চালের উপর শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে শুল্কহার কমানোর সরকারি আদেশ হিলি কাস্টমস অফিসে আসার পর শুক্রবার থেকে অপেক্ষমান চালবাহী ট্রাকগুলো বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে। শুক্রবার এবং শনিবার এই দুই দিনে চাল ভর্তি শতাধিক ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করে বলে বন্দর সুত্রে জানা যায়। এর পরিমান ৬ হাজার মেট্রিকটনেরও বেশি।

হিলি সীমান্তের চেকপোস্ট গেটে ভারতীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট রাজিব কুমার জানান, ভারত থেকে বাংলাদেশে চালের আমদানি শুল্ক বেশি থাকার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চালের রফতানির পরিমাণ কমে গিয়েছিল। এছাড়াও সম্প্রতি চালের শুল্ক প্রত্যাহার হবে এমন আশায় ভারতের ভেতরে প্রধান সড়কে শতাধিক চালবাহী ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছিল আমদানিকারকরা। এ ছাড়াও অনেকে ভারতে সীমান্ত সংলগ্ন স্থানীয় গুদামে চাল মজুদ করেছিল।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকার চালের আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে ওই দিন থেকেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আটকে থাকা সকল চালবাহী ট্রাকগুলো বাংলাদেশে রফতানি শুরু হয়েছে। যার ফলে বন্দর দিয়ে চাল রফতানির পরিমান বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট রাশেদুল ইসলাম ও রাজু আহম্মেদ জানান, ‘চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের আদেশের কপি হিলি কাস্টমসে আসায় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সার্ভারে তা এন্ট্রি করায় হিলি কাস্টমসে চাল আমদানিতে নতুন শুল্কহারে আমদানিকৃত চালের পরীক্ষণ ও শুল্কায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা আমদানিকারকদের আমদানিকৃত চাল বন্দর থেকে খালাস করার জন্য হিলি কাস্টমসে আমদানিকৃত পণ্যের বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করেছি। শুল্ক পরিশোধ করে বন্দর থেকে চাল খালাস করে আমদানিকারকদের নিজস্ব গুদামে নেওয়া হচ্ছে।’

হিলি স্থলবন্দর শুল্কষ্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মাকসুদুর রহমান জানান, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে শুল্ক কমা ও বৃদ্ধির কারণে কয়েকদিন ধরে চাল আমদানি হলেও সেগুলো শুল্কায়ন বা খালাস করা হয়নি। আমরা ২৮ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রজ্ঞাপন পেয়েছি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সার্ভারে সেটি এন্ট্রি হয়েছে। সেই অনুসারে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত চাল নতুন রেট ১০ শতাংশ শুল্কে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পণ্ণ করা হচ্ছে এবং বন্দর থেকে চালগুলো ছাড় দেওয়া হচ্ছে।’

হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ বিষয়ক কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, ‘বন্দরের ভেতর গত কয়েকদিন ধরে শুল্ক প্রত্যাহারের আশায় ৬/৭ হাজার টন চাল আটকা ছিল। শুল্ক কমানোর নতুন আদেশের কপি বন্দরে আসায় পানামা পোর্ট থেকে আটকে পড়া চালগুলো খালাস শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্দরের অভ্যন্তরে চালবাহী ট্রাক আটকে যে পণ্যজটের সৃষ্টি হয়েছিল সেটিও নিরসন হচ্ছে।’

হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক রাজিব দত্ত ও মামুনুর রশিদ জানান, শুল্ক প্রত্যাহারের আশায় বন্দরের অভ্যন্তরে ৮/১০ দিন ধরে আটকে থাকা আমদানিকৃত চাল নিয়ে জটিলতার অবসান হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্দর থেকে এসব চাল খালাস হওয়ার কারণে দেশের বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে। ঈদের আগেই দেশের বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা কমবে। দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা বিরাজ করছিল তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।

তারা আরও জানান, চাল আমদানিতে যে পরিমাণ শুল্ক আরোপিত ছিল তাতে করে শুল্ক পরিশোধসহ সব ধরনের খরচ দিয়ে এক কেজি চাল আমদানিতে ৪২ টাকার মতো পড়তো। আর এক কেজি চাল আমদানি করতে শুল্ক পরিশোধ করতে হতো ৯ টাকা থেকে ১০ টাকার মতো। বর্তমানে ভারত থেকে দেশে চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে চাল আমদানিতে শুল্ক যেমন কমবে তেমনি প্রতি কেজি চালের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা করে কমবে বলেও তারা জানান।