হেফাজতের সঙ্গে বন্ধুত্বের চেষ্টায় লাভ হবে না : মওদুদ

সরকার ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বন্ধুত্বের চেষ্টা করছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘এই চেষ্টায় কোনো লাভ হবে না। এই বন্ধুত্ব প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ সুবিধাবাদী, ফ্যাসিবাদী দল।’

সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ এ কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এতে সরকারের নানা সমালোচনার পাশাপাশি উঠে আসে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণ করে কিছু দূরে তা পুনঃস্থাপন প্রসঙ্গ।

মওদুদ আহমদের ভাষায়, সরকার ভোটের জন্য এই নাটক করেছে।

গত ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের সামনে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে নারীর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর থেকেই ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে এটিকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল হেফাজতে ইসলাম। দাবি পূরণ না হলে এর পরিণতি ভাল হবে না বলেও জানিয়ে দেয় তারা।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেন এর নির্মাতা মৃণাল হক। এরপর হেফাজতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হলেও প্রগতিশীল শক্তি জানায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সরকার উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে নতি স্বীকার করছে কি না-এ বিষয়ে সমালোচনা হয়।

আর দুই পক্ষের এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই আগের অবস্থান থেকে সামান্য দূরে শনিবার সুপ্রিম কোর্টেরই এনেক্স ভবনের সামনে ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপন করা হয়। আর এর প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজতের আমির আহমেদ শাহ শফি বলেন, এমন সংবাদে দেশবাসীর সঙ্গে আমরা বিস্মিত, হতবাক এবং বাকরুদ্ধ।

মওদুদ আহমেদ এক কথায় সরকারের অবস্থানকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, ভোটের জন্য এ নাটক। তিনি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা একটি ক্যাচি ওয়ার্ড, আওয়ামী লীগ মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও তারা আসলে সুবিধাবাদী দল। ২০০৬ সালে ভোটের আগে তারা সবচেয়ে দক্ষিণপন্থী দল খেলাফতে মজলিসের সঙ্গে ছয় দফা চুক্তি করেছিল। সেখানে ফতোয়ার বিধানও ছিল। ভোট পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সেটা করেছিল। এখনও তারা একই কাজ করছে।’

হেফাজতের সঙ্গে এই বন্ধুত্বের চেষ্টাতেও সরকার নির্বাচনে পার পাবে না মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশের মানুষ কোনো দলকে একটানা বেশিদিন ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

কেবল আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এমন দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অর্থনৈতিক যে পরিসংখ্যান দেখানো হচ্ছে, সেগুলো সত্যি নয়, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।’

বিবিএসের প্রতিবেদনের উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, সরকার প্রবৃদ্ধির কথা বলে। আজকের পত্রিকায় প্রমাণ আছে কী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা নেত্রীদের।

নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ দেওয়া, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা না দেওয়া এবং সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন করবেন, আর আমরা আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখব, সে ধরনের নির্বাচন দেশে হবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই। তবে সেটি হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, অর্থবহ নির্বাচন। এ জন্য দরকার নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার।’

ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘সরকার উন্নয়নের ভুল পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। তাদের প্রত্যেকটা হিসেবে গড়মিল আছে। বিএনপি শিগগির এ বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরবে।’

ফখরুল দাবি করেন, ‘জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে দেশের কোটি কোটি মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে জিয়াউর রহমানকে খাট করতে চায়। কারণ মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার ভূমিকা এত ব্যাপক যে সেখানে আওয়ামী লীগ ম্লান হয়ে যায়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রূপরেখার ভিত্তিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।’ এ জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মোশাররফ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের শাসনে জনগন অতিষ্ঠ। তারা আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।