৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কুড়িগ্রামের রয়েছে গৌরোবজ্জ্বল ইতিহাস।দেশ মাতৃকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১০ মার্চ জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রয়াত আহম্মদ হোসেন সরকারকে আহবায়ক ও আহাম্মদ আলী বকসীকে যুগ্ম আহবায়ক করে মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়।

সে দিন থেকেই তাদের নেতৃত্বে কুড়িগ্রামের মুক্তিকামী মানুষ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। বাংলার দামাল ছেলেরা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে হটিয়ে অবরুদ্ধ কুড়িগ্রামকে হানাদারদের কবল থেকে ৬ ডিসেম্বর মুক্ত করে। সে দিন থেকে কুড়িগ্রামবাসী এ দিনটিকে হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে পালন করে আসছে।

মুক্তিযুদ্ধে জেলায় প্রায় ৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করে এবং শহীদ হন ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় কুড়িগ্রাম ৬নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এপ্রিলের ৭ ও ১৪ তারিখ দুই দফা পাক হানাদার বাহিনী কুড়িগ্রাম আক্রমনের চেষ্টা করে দখলে নিতে ব্যর্থ হয়। ২০ এপ্রিল তিনদিক থেকে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে কুড়িগ্রাম দখল করে নেয় পাকসেনারা।

এরপর ৯মাস ধরে তারা এ এলাকার মানুষের উপর নির্যাতন করে। তারা একেরপর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। এ অবস্থায় পাকবাহিনী বিভিন্ন স্থানে বাঙালী নারীদের ধর্ষণ ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের নির্যাতন করার জন্য গড়ে তোলে একাধিক ক্যাম্প। তারা একেরপর এক এলাকায় গণহত্যা চালায় তার স্মৃতিচিহ্ন আজও বয়ে বেড়ায় জেলার মানুষজন। তবে সে সময় কুড়িগ্রাম মহকুমার রৌমারী ও ফুলবাড়ী মুক্তাঞ্চল ছিল।

মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান,আব্দুল আহাদ জানান, তারা একেরপর এক যুদ্ধে পাকবাহিনীকে পরাস্ত করেছেন থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে।প্রতিশোধের আগুন তাদের যুবক বয়সে মনকে নাড়া দেয়। তারা জীবনেরমায়া ত্যাগ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।

আগষ্ট মাস ব্যাপী মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা কায়দায় সম্মুখ যুদ্ধকে বেগবান করে তোলে। মিত্রবাহিনীর সহায়তায় হেলিকপ্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পর্যুদস্ত হলে নভেম্বরে একের পর এক এলাকা মুক্ত হতে থাকে। এর পরে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ৬ ডিসেম্বর।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, মোঃ আব্দুল বাতেন, জানান, ৬ ডিসেম্বর এর স্মৃতি আজও মনকে নাড়া দেয় । সে দিন বিজয়ের আনন্দে মানুষ আতœহারা হয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন ৫ ডিসেম্বর রাতে চতুর্দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রাম শহর ঘিরে ফেলে পাক বাহিনীর উপর আক্রমন শুরু করলে পাক বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা ট্রেনযোগে এমনকি পায়ে হেটে রংপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় এবং ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম সম্পূর্ণরূপে হানাদার মুক্ত হয়। গোটা মহকুমার মানুষ আনন্দ উল্লাস করে ক্রমাগত জানায় মুক্তিযোদ্ধাদের।

নতুন প্রজন্ম যেন সকল স্তরে মহান স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারে এ কামনা করেন মুক্তিযুদ্ধের সূর্যসৈনিক,কুড়িগ্রামের কৃতিসন্তান বীর প্রতিক আব্দুল হাই সরকার ৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত দিবস হিসেবে কুড়িগ্রামে পালনকরে আসছে কুড়িগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাধারন মানুষসহ কুড়িগ্রামের নানা সংগঠন।

সকলে চান স্বাধীনতার ৫০ বছরে যে সমস্ত বধ্যভুমি চিহ্নিত হবার পরও অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে এখনও সেখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ কিংবা কমপ্লেক্স গড়ে উঠেনি সেগুলোর বিষয়ে অতিদ্রুত বর্তমান সরকারকে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।