৭৫ বছর ধরে বরফের নিচে দম্পতি, কেন?

সুইজারল্যান্ডের মারসেলিন ও ফ্রান্সিস দুমৌলিন দম্পতি একদিন বাড়ি থেকে গরু নিয়ে পাহাড়ে বেরিয়েছিলেন। তারপর থেকেই তাদের আর কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। এই দম্পতি বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন সাত সন্তানকে। তাঁরাও বাবা-মায়ের অনেক খোঁজ করেছেন। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি তাদের।

মারসেলিন ও ফ্রান্সিস দুমৌলিন দম্পতি প্রায় ৭৫ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এই সময়ে তাদের সন্তানদের অনেকেই পরলোকগত হয়েছেন। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের তিসানফ্লিউরন হিমবাহের লেস ডাবলেরেটস রিসোর্টের বরফের একটি খাদ থেকে এক দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ৭৫ বছর আগে নিখোঁজ মারসেলিন ও ফ্রান্সিস দুমৌলিন দম্পতির মৃতদেহ এগুলো।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার ১৪ জুলাই এই দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। স্কি-লিফট কোম্পানি ‘গ্লাসিয়ার ৩০০০’-এর এক কর্মী তাদের মৃতদেহ বরফের ভাজে দেখতে পায় এবং উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

গ্লাসিয়ার ৩০০০-এর পরিচালক বের্নহার্ড সচানেন জানান, ওই কর্মী বরফের নিচে ব্যাগের কয়েকটি খণ্ড, টিনের বাটি, একটি কাচের বোতল, নারী-পুরুষের জুতা এবং তাদের দেহের একটা অংশ খুঁজে পান। এরপর তাদের উদ্ধার করা হয়।

সচানেন আরো জানান, দেখে মনে হয় ওই দম্পতি হিমবাহের একটি চিড় বা ফাটলের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে তাঁরা আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। তাদের পোশাক-আশাক দেখে মনে হয়, তারা ৭০-৮০ বছর আগে দুর্ঘটনার শিকার হন। তিনি বলেন, ‘মৃতদেহ দুটি পাশাপাশি পড়েছিল। তাদের পোশাকে যে তারিখ লেখা ছিল, সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার।’

সুইজারল্যান্ডের গণমাধ্যম জানিয়েছে, অনুমান করা হচ্ছে, এই দম্পতি ১৯৪২ সালে আল্পস পাহাড়ের দুই হাজার ৬০০ মিটার (আট হাজার ৫৩০ ফুট) উঁচুতে গরু চড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

মারসেলিন ও ফ্রান্সিস দুমৌলিন দম্পতির কনিষ্ঠ কন্যা মারসেলিনি উদ্রে দুমৌলিনর বয়স এখন ৭৯ বছর। তিনি জানিয়েছেন, এখন তিনি তাঁর বাবা-মায়ের শেষকৃত্যের পরিকল্পনা করছেন। কারণ, এটা তাদের প্রাপ্য।

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাবা-মাকে পাওয়া যায়নি জানিয়ে মারসেলিনি উদ্রে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি লে মাতিনকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৭৫ বছর এই সংবাদের আশায় ছিলাম। এটা আমাকে খুব প্রশান্তি দিল।’

পুলিশ জানিয়েছে, কয়েদিনের মধ্যে তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

মারসেলিনি উদ্রে বলেন, মা ছিলেন শিক্ষক আর বাবা জুতা তৈরি করতেন। মা বাবার সঙ্গে এ রকম ভ্রমণে খুব কমই যেতেন। কারণ মা তাঁর সাংসারিক জীবনের প্রায় সময়টাই গর্ভধারণে ব্যয় করেছেন। যার কারণে এ ধরনের ভূখণ্ডে হাঁটা তার জন্য খুবই কঠিন ছিল তখন।

‘আমি কখনো আশা ছাড়িনি। আমি বিশ্বাস করতাম, কোনো একদিন বাবা-মাকে খুঁজে পাবই। এমনকি আমি এ পর্যন্ত তিনবার ওই হিমবাহে তাদের সন্ধানও করেছি।’

মারসেলিনি আদ্রে তাঁর মা-বার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শেষকৃত্যের কালো পোশাক পরবেন না জানিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি, সাদাই হবে অধিক সঠিক। কারণ সাদা আশার প্রতিনিধিত্ব করে। যা (আশা) আমি কখনো হারাইনি।’